Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

আগলা ইউনিয়নের ইতিহাস

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনে উত্তরাঞ্চলের ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলাধীন আগলা ইউনিয়ন। নদী বেষ্টিত এলাকা হিসাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথানবাবগঞ্জ উপজেলারপ্রাণ কেন্দ্র থেকে প্রায়০৮  কিলোমিটার অদূরে সু-পরিচিত এবং বানিজ্যিকএলাকার নাম “ইউনিয়ন”।  অতীত কে নয় বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক পথেসু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়িয়ে দেশ ও সমাজেরউন্নয়নের দুয়ার উন্মোচন করতে সদা প্রস্তূত শিকারীপাড়াইউনিয়ন পরিষদ।

 

কৃষাণ-কৃষাণীর পরিশ্রম ক্লান্ত হাতে বুনে দেওয়া ধান, পাট, গম, ভুট্টা, কুমড়া, মিষ্টি আলু, বাদাম আর হরেক কিসিমের ডালবীজ-তেলবীজ অঙ্কুরিত হয়ে গোটাচরকে ঢাকে সবুজের চাদরে। ফসলের মাঠে একপাল হাওয়া যেমন মঞ্জরিত-মুকুলিতফসলগুলোকে দুলিয়ে দিয়ে যায়, তেমনি ফসল তোলার মৌসুম 'মারাকাটি'তে দুলে ওঠেচরবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আশা আর জীবিকার স্বপ্ন। ঘরে তোলা ফসল, নদী থেকেজেলেদের জালে ধরা চকচকে টাটকা মাছগুলো কিংবা বিস্তীর্ণ চরের তৃণ খেয়ে বেড়েওঠা গবাদিপশুগুলোকে মালের নৌকায় বোঝাই করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়নেওয়া হয়। তারপর পানসি, কোষা, ডিঙি কিংবা যাত্রাবাহী বড় নৌকার ভিড়ে মালেরনৌকা পাড়ি দেয় দূরের নদীপথ। শহর-বন্দরে ফসল, মাছ, গবাদিপশু ভালো দামেবিকানোর পর তেল-সাবান, ঘরের টিন, মেশিনের যন্ত্রাংশ, টিউবওয়েল, সার কিংবাপ্রয়োজনীয় দা-কাস্তের পাশাপাশি বউয়ের জন্য একটি শাড়ি, অপেক্ষমাণছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামা কিংবা কিছু শহুরে মুখরোচক খাবার না কিনেই যেকৃষক ফিরতি নৌকায় ওঠে, তাও নয়। এক চর থেকে আরেক চরে নদী পাড়ি দিয়ে 'সাগাই' আসে বেড়াতে, মেয়েজামাই নাইওর আসে। নিজস্ব ঐতিহ্যে, নিজস্ব রীতিতে অতিথিআপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে ওঠে বাড়ির বউ-ঝিরা। হাটবাজার-মেলার দিন, জন্মদিন, বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান, ফসল তোলার মৌসুম-নবান্ন আরও নানা উৎসব-পার্বণে চর আরনদীর মুখচ্ছবির সঙ্গে মিশে যায় চরের ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষের উৎসবমুখরমুখ। তবে এও চিরবাস্তব, চরবাসীর সবটাই সুখের ছিল না, সুখের নয়। ফি বছরবন্যা, নদীভাঙন, কখনও জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় বা খরার মতো দুর্যোগগুলো চরবাসীরজন্য কেবল নির্মম পরিণতিই বয়ে আনে না, মূল ভূখণ্ডের অধিবাসীদের চেয়ে তাদেরঅনেক বেশি মূল্য গুনতে হয়। যখন বন্যার পানিতে ভেসে যায় ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, স্কুল-মাদ্রাসা-মসজিদ প্রাঙ্গণ, খোঁয়াড়ের হাঁস-মুরগি এমনকি বজ্রপাতে মারাপড়ে হালের গরুটি, বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য ও পানীয়র জন্য হাহাকাররব কিংবা যখন খরায় পুড়ে চৌচির হয়ে যায় ফসলের মাঠ, মানুষের জীবিকায়ন, তখনচরের জীবন দুর্বিষহ দুঃস্বপ্নের প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতি আরমানুষে বাধে যুদ্ধ। যুদ্ধে পরাস্ত, মঙ্গাক্রান্ত, সহায়-সম্বল, চালচুলোহীন, কর্মহীন মানুষ বেরিয়ে পড়ে শহর থেকে শহরে, এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। রিকশাচালায়, কুলি-মজুরি খাটে কিংবা কারখানার শ্রমিক হয়ে ফেরে দু'মুঠো ভাতেরসন্ধানে। নিজেকে বাঁচতে হবে, বউ-সন্তানকে বাঁচাতে হবে। মানুষেরদুঃখকষ্টগুলো যখন স্বাভাবিকসীমার মধ্যে থাকে, তখন তার সুখের কোনো অনিষ্ট হয়না। সীমা অতিক্রান্ত হলেই জীবন-সুখের ওপর খড়্গহস্ত নেমে আসে।দুঃখকষ্টগুলোকে সীমার মধ্যে আবদ্ধ করতেই মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সমঝোতায় আসে।প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত চরাঞ্চলে গৃহনির্মাণ, পশু প্রদান, ক্ষুদ্রঋণবিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা জীবিকায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারিসংস্থাগুলো মানুষের জীবনে সুখের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে হয়তো। কিন্তুনিঃস্বতা থেকে চরবাসীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে আরও অনেক কাঠখড় পোড়াতেহয়। লাঙল-জোয়াল কাঁধে কৃষাণ দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যায় নবপল্ললিত ফসলের ক্ষেতে।জালবৈঠা হাতে জেলে ছুটে যায় তীরভাঙা ঢেউয়ের নদীতে নাও ভাসাতে। বিরান ভূমিতেঘর ওঠে। খোলা হাওয়ায় নেচে ওঠে সবুজ ফসল। সে ফসলের মাঠ পেরিয়ে ছেলেমেয়েরাস্কুলে যায়। শান্ত নিবিড় নদীতে রঙিন পালের নৌকা তরতর করে বয়ে চলে দূরগন্তব্যে। মানুষ স্বপ্ন বুনতে ভালোবাসে। ঝড়োরাত্রির ধকল নিয়েও মানুষ স্বপ্নবুনে চলে যমুনার চরে, পদ্মার চরে, মেঘনার চরে।